বাইরে প্রচণ্ড রৌদ্র । এর মাঝেই কোচিং এ যেতে হবে । হাতে সময়ও অল্প ।
তাই তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিল টিনা ।
-আম্মু, আসছি ... ।
-কিছু মুখে দিয়ে যা...?
-এখন সময় নেই ।
এই বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেল । দুপুরবেলা
এমনিতেই রিক্সা পাওয়া যায় না । তারপর আবার শুক্রবার । কোচিংটাও বেশি দূরে নয় । পায়ে হাঁটলে
বড়জোর ১৫-২০ মিনিটের পথ । কিন্তু হাতে যে একদমই সময় নেই । কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে
রিক্সার দেখা না পা হাঁটা দিল সে । পথিমধ্যে হঠাৎ একটি রিকশা সামনে এসে দাঁড়াল ।
- উঠে আয়, টিনা...
- না থাক । এই সামান্য পথ
হেঁটেই যেতে পারব, তমাল ।
- আর ঢং করিস না । কোচিং
শুরু হতে আর বেশি বাকি নেই ।
তমাল । একইসাথে টিনার কোচিং পরে । শুধু মুখচেনা । আগে তেমন কথা হয় নাই । তাই টিনা
ইতস্তত বোধ করছিল । কিন্তু সময় নেই দেখে সে আর আপত্তি করল না । কোচিং থেকে ফেরার
সময়...............
-তুই আজকে না থাকলে কোচিং টা সময়মত ধরতে পারতাম
না ।
-তাহলে আপত্তি করছিলি যে ?
-না, ভাবলাম কে আবার কি ভেবে বসে ? মানুষের কথা
তো বলা যায় না ।
-মানুষের কথা বাদ দে । আমরা ভাল বন্ধু হতে পারি
না ?
-কেন আমরা কি বন্ধু না ?? !!!
-হ্যা । তবে
আমরা তো আমদের ভালভাবে চিনতে-জানতে পারি ।
-তা পারি । তোর বাসা কোথায় ?
-শ্যামলী । তোর ?
-মোহাম্মদপুর । এখন কোথায় যাবি ? বাসায় ?
-হ্যাঁ । বাসায়
ফিরতে হবে ।
-চল তবে হাঁটতে হাঁটতে কথা বাল যাক ।
-চল । তোর বাসায় কে কে আছেন ?
-আমি , ছোট এক বোন আর আব্বু-আম্মু । তোর ?
-আমার বড় বোন ছিল বিয়ে হয়ে গেছে । এখন
আব্বু-আম্মু, আমি আর দাদা-দাদি ।
এভাবে কিছুক্ষন হাঁটতে হাঁটতে টিনার বাসার কাছে
চলে আসল ।
-আজ তবে আসি ।
-আয় । আচ্ছা তোর কন্টাক্ট নম্বরটা দেয়া যাবে ?
-আমি ফোন ইউজ করি না । তবে বাসার নম্বরটা রাখতে
পারিস ।
-আচ্ছা দে । যোগাযোগ রাখিস ।
-টাটা । কাল আবার দেখা হবে ।
-টাটা ।
এভাবেই চলতে থাকল ওদের বন্ধুত্ত । মাঝে মাঝে ফোনে
কথাও হয় । আর কোচিংএ তো রোজ দেখা হয়ই । আইসক্রিম খাওয়া ,পার্কে ঘুরতে যাওয়া , কোন
কোন দিন রেস্তোরায় বসে আড্ডা দেয়া এভাবে যেন পার হতে লাগল টিনা আর তমালের দিনগুলো
। এরই মাঝে কখন যে তাদের বন্ধুত্ত ভালবাসায় পৌঁছে গেসে তা তারা নিজেরাও জানে ।
একদিন ফোনে কথা হচ্ছে ওদের মাঝে...............
-তমাল, আমাদের যে এতদিনের বন্ধুত্ত এটা কি শুধুই
বন্ধুত্ত নাকি এর আরও বেশি কিছু ??
-এর চেয়ে বেশি মানে ঠিক বুঝলাম না ... !
-মানে আমাদের এই সম্পর্কটা কি বন্ধুত্তের মাঝেই সীমাবদ্ধ
থাকবে ? এর বেশি কি গড়াতে পারি না ?
-মানে তুই কি আমাকে ভালবাসিস ?
-ইয়ে মানে.........
-বুঝছি । আসলে এই কথাটাই তোকে অনেক দিন বলব বলব
করে ঠিক বলা হয়ে ওঠে নি । তুই এটাকে কিভাবে নিস ? এতে যদি আমাদের বন্ধুত্ত আবার
নষ্ট হয়ে যায় ? এসব ভেবে আমি তোকে বলার সাহস করে উঠতে পারছিলাম না ।
-( টিনার নিস্তব্ধ নীরবতা । কিছু বলতে পারছে না সে । )
-তোর বাসার কেউ বিষয়টা জানে ?
-না । জানানো হয় নি । জানি না, তারা বিষয়টাকে
কিভাবে নিবেন । এমনিতেই বড় আপুর লাভ ম্যারেজ নিয়ে বাসায় প্রবলেম হইছিল । তাই তারা
আমার বিষয়ে চিন্তিত, আমি যদি আপুর মত হয়ে যাই !!!
-তাহলে তোর কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই । সময় আসুক
সব ঠিক হয়ে যাবে ।
-কিছুই ঠিক হবে না ।
-এত চিন্তা করিস না । সময় আসুক দেখা যাবে ।
-এখন কি আমরা তুই থেকে তুমি তে যেতে পারি ??
-বলতে পারিস তবে এটা শুধু আমাদের মধ্যে । আর কেউ
যেন না জানে ?
-ঠিক আছে কেউ জানবে না ।
এভাবে বছর-মাস পাড়ি দিয়ে অতিবাহিত হল পাঁচটি বছর । এর মাঝে টিনার
বাসায় ওর আব্বু-আম্মু বিয়ে নিয়ে কিছু বললে লেখা-পড়ার ওজুহাত দিয়ে তা পিছিয়ে দেয় । এমনিতে বাসায় জানে, ও আর তমাল অনেক ভাল বন্ধু ।
ডুবে ডুবে যে ওরা পানি খাচ্ছে এটা কেউ না । মাঝে কয়েকবার টিনার বাসায়ও বেড়াতে গিয়েছিল তমাল । আর তমালকেও ওর বাসা থেকে বাসা থেকে প্রস্তাব
পাঠানোর জন্য বলছিল টিনা । তমালের
শুধু কথা একটাই, একটা ভাল চাকরী না পেলে এই ব্যাপেরে সে বাসায় কিছু বলতে পারবে না ।
ততদিনে তমাল প্রাইভেট মেডিক্যাল থেকে এমবিবিএস পাস করে একটি চেম্বার
খুলে প্র্যাকটিস করছে । অন্যদিকে টিনাও
ইংরেজীতে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স এ ভর্তি হয়েছে । এবার বাসার জানানোর পালা ।
-বাসায় জানাইছ ?
-দেখি আজ বলব ।
-প্রতিদিনই তো বল আজ বলব । সেই আজ টা কি আজকে হবে
তো ? নাকি কাল আবার বলবে, আজ বলতে পারি নাই ।
-হবে হবে । আজকেই বলব, ইনশাল্লাহ ।
-দেখা যাবে ।
পরদিন দুপুরে হঠাৎ তমালের আব্বু-আম্মু টিনার বাসায় । তমালের
আব্বু-আম্মু গল্পে গল্পে খুলে বলল সব কাহিনী । টিনার পরিবার থেকেও রাজি । সাথে
সাথে তমালকে টিনার ফোন ।
-গতকাল বলছ তাইলে ।
-হ্যাঁ । তোমার তো মন মানছিল না ।
-তোমার আব্বু-আম্মু বাসার সবাইকে জানাইছে । আমার
বাসার দিক থেকেও সবাই রাজি ।
-এখন খুশি তো ??
-কেন তুমি খুশি হও নি মনে হয় ?
-হুম । হ্যাপি...............
এরপর বিয়ে । সুখের সংসার করতে লাগল তমাল আর টিনা ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন